90

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর শর্তাবলি

প্রশ্ন: 12295

অনুগ্রহ করে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-র শর্তাবলি বুঝিয়ে বলবেন।

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর শর্ত সাতটি। সেগুলো হচ্ছে: ইলম, ইয়াকীন, কবুল করা, নতি স্বীকার করা, সত্যবাদিতা, একনিষ্ঠতা, ভালোবাসা।

উত্তর

শাইখ হাফেয আল-হাকামী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘সুল্লামুল উসূল’ নামক পঙক্তিমালায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-র শর্তাবলি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন:

العلم واليقين والقبـــــول *****  والانقيـاد فادر ما أقول

والصـدق والإخلاص والمحبة ***** وفقك الله لما أحبــــه

“ইলম, ইয়াকীন, কবুল করা ও নতি স্বীকার করা; আমি যা বলছি তা জেনে নাও।

সত্যবাদিতা, একনিষ্ঠতা, ভালোবাসা। আল্লাহ যা ভালোবাসেন তোমাকে সেটা পালন করার তাওফিক দিন।”

 প্রথম শর্ত: ইলম (জানা)

এ কালিমার অর্থ জানা। এ কালিমাতে نفي (নাকচকরণ) ও إثبات (সাব্যস্তকরণ) দ্বারা কী উদ্দেশ্য করা হয়েছে তা অবগত হওয়া। এমন জানা যা অজ্ঞতাকে নাকচকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন:

فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ

জেনে নাও: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (কোন উপাস্য সত্য নয়; আল্লাহ ছাড়া)।”[সূরা মুহাম্মাদ: ১৯]

তিনি আরো বলেন:

إِلَّا مَن شَهِدَ بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ

তবে তারা ছাড়া যারা সত্যের (তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর) প্রতি সাক্ষ্য দিয়েছে এ অবস্থায় যে, তারা জানে।”[সূরা যুখরূফ: ৮৬] অর্থাৎ মুখ দিয়ে তারা যা উচ্চারণ করেছে অন্তর দিয়ে সেটির অর্থ তারা জেনেছে। সহীহ হাদীসে আছে: উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: (مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ دَخَلَ الْجَنَّة) “যে ব্যক্তি এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, সে জানে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (কোন উপাস্য সত্য নয়; আল্লাহ ছাড়া) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

দ্বিতীয় শর্ত: ইয়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস)

এই কালিমা উচ্চারণকারী এই কালিমার মর্মের প্রতি সুনিশ্চিত অনড় বিশ্বাসী হওয়া। কারণ নিশ্চিত জ্ঞান ছাড়া অনুমান ঈমানের কোন কাজে আসে না। সুতরাং যে ঈমানে সন্দেহ ঢুকেছে সে ঈমানের কী অবস্থা? মহান আল্লাহ বলেন:

إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ

মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, এরপর তারা সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ।”[সূরা হুজুরাত: ১৫]

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি তাদের ঈমানের সত্যতার ক্ষেত্রে শর্ত করা হয়েছে যেন তারা সন্দেহ পোষণ না করে। সন্দেহ পোষণকারী মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত।

সহীহ হাদীসে আছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (কোনো উপাস্য সত্য নয়; আল্লাহ ছাড়া) এবং আমি তাঁর রাসূল (বার্তাবাহক)। যে কোনো বান্দা এ দু’টো সাক্ষ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ পোষণ করা ছাড়া আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে সে জান্নাতে যাবে।” অন্য বর্ণনাতে এসেছে: “যে কোনো বান্দা এ দু’টো সাক্ষ্য নিয়ে সন্দেহমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তার জান্নাতে প্রবেশে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।”

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদীসে রয়েছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নিজের জুতা-জোড়াসহ পাঠিয়ে বলেন: এ দেয়ালের পেছনে তুমি যাকে পাবে সে যদি অন্তরের নিশ্চিত বিশ্বাসসহ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সাক্ষ্য প্রদান করে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান কর”।

তিনি এই কালিমা উচ্চারণকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে শর্ত করেছেন উচ্চারণকারীর অন্তর এ কালিমার প্রতি সন্দেহমুক্ত ও নিশ্চিত বিশ্বাসী হওয়া। শর্ত পাওয়া না গেলে ফলাফলও পাওয়া যাবে না।

তৃতীয় শর্ত: কবুল করা

এ কালিমা যা দাবি করে সেটাকে অন্তর ও জিহ্বা দিয়ে কবুল করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের কাছে পূর্ববর্তীদের ঘটনাবলি উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন যে, যারা এ কালিমাকে গ্রহণ করেছে তাদেরকে বাঁচানো হয়েছে; আর যারা এ কালিমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে ও অস্বীকার করেছে তাদের থেকে তিনি প্রতিশোধ নিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

ٱحۡشُرُواْ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ وَأَزۡوَٰجَهُمۡ وَمَا كَانُواْ يَعۡبُدُونَ 22 مِن دُونِ ٱللَّهِ فَٱهۡدُوهُمۡ إِلَىٰ صِرَٰطِ ٱلۡجَحِيمِ 23 وَقِفُوهُمۡۖ إِنَّهُم مَّسۡـُٔولُونَ 24 ﵞ إلى قوله ﵟإِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ 35 وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوٓاْ ءَالِهَتِنَا لِشَاعِرٖ مَّجۡنُونِۭ 36

ভাবানুবাদ: “(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে) ‘জালেমদেরকে, তাদের দোসরদেরকে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যে সবের পূজা করত তাদেরকে একত্রিত করো। তারপর তাদেরকে জাহান্নামের পথে নিয়ে যাও। আর তাদেরকে থামাও; কারণ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।”.....

“যখন তাদেরকে বলা হতো: ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (কোনো উপাস্য সত্য নয়; আল্লাহ ছাড়া) তখন তারা ধৃষ্টতা দেখাত। আর তারা বলত: আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করব?”[সূরা সাফ্‌ফাত: ২২-৩৬]

এখানে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করার কারণ ও হেতু নির্ধারণ করেছেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা থেকে অহংকার করা এবং যিনি এ কালিমা নিয়ে এসেছেন তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। তথা এই কালিমা যেটাকে নাকচ করেছে তারা সেটাকে নাকচ করেনি এবং এ কালিমা যেটাকে সাব্যস্ত করেছে তারা সেটাকে সাব্যস্ত করেনি। বরং অহংকার করে বলেছে:

أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ (5) وَانْطَلَقَ الْمَلَأُ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوا وَاصْبِرُوا عَلَى آلِهَتِكُمْ إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ (6) مَا سَمِعْنَا بِهَذَا فِي الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَذَا إِلَّا اخْتِلَاقٌ

ভাবানুবাদ: “সে কি বহু উপাস্যকে এক উপাস্য বানিয়ে ফেলেছে? এ তো এক অদ্ভুত ব্যাপার! তাদের মোড়লেরা এই বলে চলে গেল: ‘তোমরা গিয়ে তোমাদের উপাস্যদের উপাসনায় অটল থাকো। নিশ্চয় এটা (তোমাদের বিরুদ্ধে) একটি উদ্দেশ্যমূলক ব্যাপার। আমরা তো সর্বশেষ ধর্মে (খ্রিষ্টান ধর্মে) এ কথা শুনিনি! এটি মিথ্যা উদ্ভাবন ছাড়া কিছুই নয়।”[সূরা সোয়াদ: ৫-৭]

মহান আল্লাহ তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাদের জবাব দিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বচনে। আল্লাহ বললেন:

بَلْ جَاءَ بِالْحَقِّ وَصَدَّقَ الْمُرْسَلِينَ

ভাবানুবাদ: “(এ রকম বাজে কথা) বরং তিনি সত্য নিয়ে এসেছেন এবং (অন্য) রাসূলদেরকে সত্যায়ন করেছেন।”[সূরা সাফ্‌ফাত: ৩৭]

তারপর যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহকে গ্রহণ করে নিয়েছে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন:

إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ (40) أُولَئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَعْلُومٌ (41) فَوَاكِهُ وَهُمْ مُكْرَمُونَ (42) فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ

ভাবানুবাদ: “তবে আল্লাহর বাছাইকৃত বান্দারা নয়। (তারা তাদের সৎকাজের পুরস্কার পাবে) তাদের জন্য (জান্নাতে) রয়েছে নির্দিষ্ট জীবিকা, ফলমূল। তারা পুরস্কৃত হবে জান্নাতুন নাঈমে (সুখের বাগানে)।”[সূরা সাফ্‌ফাত: ৪০-৪৩]

সহীহ হাদীসে আছে: আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: যে হেদায়াত ও ইলম দিয়ে আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন তার উদাহরণ হল প্রচুর বৃষ্টিপাতের মত। যে বৃষ্টি কোন একটি ভূখণ্ডের উপর পড়েছে। এর মধ্যে কিছু ছিল ভালো মাটি, যা পানিকে গ্রহণ করেছে এবং প্রচুর উদ্ভিদ ও লতাপাতা উৎপন্ন করেছে। আবার অন্য কিছু মাটি ছিল শক্ত। সে মাটি পানিকে ধরে রাখেনি এবং সেখানে উদ্ভিদও গজায়নি। এটা হলো সেই ব্যক্তির উপমা যে আল্লাহর দ্বীনে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছে এবং আল্লাহ যা দিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন তার দ্বারা তাকে উপকৃত করেছেন। অতঃপর সে নিজে এ জ্ঞান শিখেছে ও অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে। এবং ঐ ব্যক্তির উপমা, যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে মাথা তুলেনি এবং আল্লাহর হেদায়াত কবুল করেনি, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।” 

চতুর্থ শর্ত: নতি স্বীকার করা

এ কালিমা যা নির্দেশ করে সেটার প্রতি নতি স্বীকার করা, যা প্রত্যাখ্যানের বিপরীত। মহান আল্লাহ বলেন:

وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى وَإِلَى اللَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ

“যে নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে এ অবস্থায় যে, সে মুহসিন (ভালো আমলকারী) সে সর্বাধিক মজবুত হাতল (অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ধারণ করল। আর সব বিষয়ের শেষ পরিণতি আল্লাহর কাছেই।”[সূরা লোকমান: ২২]

আয়াতে يُسْلِمْ وَجْهَهُ এর অর্থ يَنْقَادُ (নতি স্বীকার করে) এ অবস্থায় যে, সে একত্ববাদী মুহসিন (ভালো আমলকারী)। যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর দিকে সমর্পণ করেনি এবং সে মুহসিন নয় সে মজবুত হাতল ধারণ ধরেনি। আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীর মর্ম এটাই:

وَمَنْ كَفَرَ فَلَا يَحْزُنْكَ كُفْرُهُ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ فَنُنَبِّئُهُمْ بِمَا عَمِلُوا

“আর যে কুফরি করেছে তার কুফরি যেন আপনাকে চিন্তিত না করে; (কেননা) আমার কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন (নির্ধারিত আছে)। তখন আমি তাদেরকে তাদের যাবতীয় কৃতকর্ম অবহিত করব।”[সূরা লোকমান: ২৩]

সহীহ হাদীসে আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমি যা নিয়ে এসেছি সেটার অনুগামী না হবে।” আর এটাই হলো চূড়ান্ত নতি-স্বীকার ও বশ্যতা।

পঞ্চম শর্ত: সত্যবাদিতা

এ কালিমা বলায় সত্যবাদী হওয়া; যা মিথ্যাকে নাকচকারী। তা এভাবে যে, অন্তর থেকে সত্যভাবে এ কালিমাটি বলা; যাতে করে মুখের বলাটা অন্তরের সাথে মিলে। মহান আল্লাহ বলেন:

الم (1) أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ (2) وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ

“আলিফ-লাম-মীম। মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? তাদের পূর্বে যারা ছিল আমি তো তাদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম। আল্লাহ অবশ্যই সত্যবাদী আর মিথ্যাবাদীদেরকে (সুস্পষ্টরূপে) জেনে নিবেন।”[সূরা আনকাবূত: ১-৩]

যে সমস্ত মুনাফিক অসত্য অভিপ্রায় নিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছিল, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন:

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ (8) يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ (9) فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ

“আবার কিছু মানুষ আছে যারা বলে: ‘আমরা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছি’ কিন্তু তারা আসলে ঈমানদার নয়। তারা আল্লাহ ও বিশ্বাসীদেরকে ধোঁকা দিতে চায়; তবে কার্যত তারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দেয়, যা তারা বুঝতে পারে না। তাদের অন্তরে ব্যাধি আছে; আল্লাহ তাদের সে ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর মিথ্যা বলার কারণে তাদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি নির্দিষ্ট আছে।”[সূরা বাকারা: ৮-১০]

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আছে: মুয়ায ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি অন্তর থেকে সত্যভাবে এই সাক্ষ্য প্রদান করবে যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ’ (কোন উপাস্য সত্য নয়; আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মাদ তাঁর দাস ও রাসূল) আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন।”

ষষ্ঠ শর্ত: একনিষ্ঠতা

ইখলাস বা একনিষ্ঠতা হলো আমলকে যাবতীয় শির্কের পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করা। মহান আল্লাহ বলেন:

أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ

“জেনে রেখো, একনিষ্ঠ ধর্ম আল্লাহরই।”[সূরা যুমার: ১৪]

সহীহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আমার সুপারিশ পেয়ে সর্বাধিক সৌভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি যে ইখলাসের সাথে অন্তর থেকে বা মন থেকে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে।”

সপ্তম শর্ত: ভালোবাসা

এই কালিমাকে, এই কালিমার দাবিকে, এই কালিমার নির্দেশনাকে, এই কালিমা অনুযায়ী আমলকারীকে এবং কালিমার শর্ত মেনে চলা ব্যক্তিকে ভালোবাসা এবং যা কিছু কালিমার বিপরীতে যায় সেটাকে ঘৃণা করা। মহান আল্লাহ বলেন:

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ

“আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।”[সূরা বাকারা: ১৬৫]

আল্লাহ জানিয়েছেন যে, যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে বেশি ভালোবাসে; কারণ তারা আল্লাহর ভালোবাসায় কাউকে শরীক করেনি যেমনিভাবে আল্লাহকে ভালোবাসার দাবিদার মুশরিকরা করেছে। যে মুশরিকেরা আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর মত তাদেরকেও ভালোবেসেছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আছে: আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতা এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয় হবো।”

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

সূত্র

শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android