বৃহস্পতিবার 18 রমজান 1445 - 28 মার্চ 2024
বাংলা

যে নারী কিছু মানসিক সমস্যাগ্রস্ত হয়ে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন ও তীব্র হতাশাগ্রস্ত তিনি এর চিকিৎসা জানতে চান

প্রশ্ন

আমি মানসিকভাবে অসুস্থ। ১২ বছর ধরে আমি মানুষের সাথে মিশি না, দূরে থাকি। আমার সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। এর মধ্যে ছিল মাদ্রাসা। আমার বাবা আমাদেরকে গুরুত্ব দেয়নি কিংবা আমাদের ব্যাপারে চেষ্টা করেনি। আমি কিছু মানসিক রোগ ভুগছি। আমি নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিঁড়ে ফেলি। সমাজকে ভয় পাই ও নার্ভাস ফিল করি। আমি শ্বাসকষ্টে ভুগি। নিজেকে খুব ঘৃণা করি। আমার স্বপ্নগুলোর অন্ত নেই। এখনও আমি আশাবাদী ও দোয়া করি। কিন্তু আমি আমার নিজেকে কিভাবে মুক্ত করতে পারব; যদি আমি কোন সাহায্যকারী না পাই। আমাদের বাবার কাছে গিয়ে যদি অভিযোগ করি তিনি রেগে যান। কখনও আমাদেরকে গালি দেন এবং আমাদেরকে এড়িয়ে যান। আমার মা আমাদেরকে নিয়ে চিন্তা করেন; কিন্তু তার অবস্থা আমাদের মত। আমাদের ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে গেল। আমরা সমাজকে অপছন্দ করি। আমি আশা করব আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমি মরে যেতে চাই; যদি আল্লাহ্‌ এই কষ্ট থেকে আমাকে রেহাই দেন।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

প্রথমতঃ আমরা সেই আল্লাহ্‌র প্রশংসা করছি যিনি আপনাকে এ ধরণের সামাজিক প্রতিকূলতা ও মানসিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ফরয আমলগুলো পালন করার ও নফল আমল পালনে সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দিয়েছেন। কত মানুষ এর চেয়ে অনেক হালকা সমস্যাগ্রস্ত হওয়ার তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে এভাবে পথচলা ছেড়ে দিয়েছে! কত মানুষ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করে আসমান ও জমিনের প্রতিপালকের অবাধ্যতায় সময় কাটাচ্ছে!

তবে এ যামানায় যে ব্যক্তি শিক্ষা লাভ করেনি তাকে কী পরিমাণ সামাজিক চাপ ও নেতিবাচক মন্তব্য মোকাবিলা করতে হয় সেটা আমরা উপলব্ধি করছি!

কিন্তু আসনু তো এ ইস্যু নিয়ে আমরা একটুখানি চিন্তা করি। ভবিষ্যতে সফল হওয়া বা বিফল হওয়ার আসল মানদণ্ডটা কী?! ভবিষ্যতের স্বরূপটাই বা কী?

যদি সবচেয়ে ভাল সাবজেক্টের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক দুনিয়াবী সব প্রিয়বস্তু অর্জন করতে সক্ষম হন; কিন্তু তিনি আল্লাহ্‌র কাছে পৌঁছতে সক্ষম না হন! এটা কি সফলতা; নাকি ব্যর্থতা?!

যদি একজন সাধারণ মানুষ দুনিয়াবী সব প্রিয়বস্তু থেকে বঞ্চিত হন; কিন্তু আল্লাহ্‌র কাছে পৌঁছতে সক্ষম হন! এটা কি সফলতা; নাকি ব্যর্থতা?!

আল্লাহ্‌ আপনাকে রক্ষা করুন, আসুন এই বিস্ময়কর হাদিসটি নিয়ে ভাবি যে হাদিসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন: কিয়ামতের দিন দুনিয়ার সর্বাধিক নেয়ামত ভোগকারী জাহান্নামী ব্যক্তিকে এনে একবার শুধু জাহান্নামে ডুবানো হবে এরপর জিজ্ঞেস করা হবে: হে আদম সন্তান! তুমি কি কোনদিন ভাল কিছু দেখেছ? তুমি কি কখনও নেয়ামতের মধ্যে ছিলে? সে বলবে: আল্লাহ্‌র শপথ, না; হে আমার প্রভু। দুনিয়াতে সর্বাধিক দুর্দশাগ্রস্ত জান্নাতী ব্যক্তিকে এনে একবার জান্নাতে ডুবানো হবে। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে: হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনও দুর্দশা দেখেছ? কখনও কি তুমি কষ্টে ছিলে? সে বলবে: আল্লাহ্‌র শপথ, না; হে আমার প্রভু। কখনও আমার দুর্দশা ছিল না, কখনও আমার কষ্ট ছিল না।[সহিহ মুসলিম]

এই হচ্ছে দুনিয়ার সর্বাধিক সুখ ভোগকারী জাহান্নামী ব্যক্তিকে শুধু একবার জাহান্নামে ডুবানোর পর তার অবস্থা!

আর এই হচ্ছে দুনিয়ার সর্বাধিক দুর্দশাগ্রস্ত জান্নাতী ব্যক্তিকে জান্নাতে একবার ডুবানোর পর তার অবস্থা!

ওহে আল্লাহ্‌র বান্দী! আপনার পিতা (আল্লাহ্‌ তাকে সংশোধন করে দিন) হয়তো আপনাদেরকে শিক্ষা দেয়া, আপনাদের মানসিক যত্ম নেয়ায় কসুর করেছে। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন তাঁর অনুগ্রহে ও মহত্বে তাকে সংশোধন করে দেন। কিন্তু এই কসুরের প্রতিকার করা সম্ভবপর এবং এই কসুরের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক বিষয়গুলো থেকে নিম্নে বর্ণিত উপায়ে মুক্ত হওয়া যেতে পারে:

এক: অবিরাম আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের কাছে বিনীত হয়ে দোয়া করা, তাঁর আনুগত্য মাফিক আমল করা। নিশ্চয় তিনি তাঁর নেককার বান্দাদের প্রতি সন্তানের প্রতি মায়ের চেয়ে অধিক দয়ালু!

দুই: ধর্মীয় চিকিৎসকদের কাছে ধর্ণা দেয়া— সম্ভব হলে তাদের মজলিসগুলো ও যিকিরের হালকাগুলোতে সরাসরি হাযির হওয়ার মাধ্যমে। সেটা সম্ভব না হলে টিভি-মোবাইলের স্ক্রীনে কিংবা ইন্টারনেটে তাঁদের আলোচনাগুলো ও উপকারী বক্তব্যগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে।

তিন: দেহের চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হওয়া— মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে; যাতে করে মানসিক ও আচরণগত চিকিৎসার মাধ্যমে বিষণ্ণতা ও হতাশার উপসর্গগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তাদের সাথে বৈঠক করা যায়।

চার: এই উপসর্গগুলো থেকে মুক্তি লাভের জন্য; বিশেষতঃ আত্মহত্যার চিন্তা থেকে; এই সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য একটি ঔষধের সহযোগিতা নেয়া। সেটা হলো prozac। প্রথমে এই ঔষধটি প্রতিদিন সকালে ২০ মিলিগ্রাম করে খাওয়া শুরু করতে হবে। দেড়মাসে ঔষধটির সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছতে হবে।

জেনে রাখতে হবে প্রথম দিকে ঔষধটি খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। যেমন- গলা শুকিয়ে যাওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য। ধীরে ধীরে এটি কমে যাবে। তবে ডোজ বাড়ানো কিংবা ক্রমান্বয়ে এই ঔষধ খাওয়া ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ হঠাৎ করে ঔষধ খাওয়া ছেড়ে দিলে কিছু নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে।

পাঁচ: শরীর চর্চা ও পারিবারিক কাজ করা এবং কল্যাণকর কাজকর্মে নিমগ্ন থাকার চেষ্টা করা। কেননা এর ইতিবাচক ভাল প্রভাব রয়েছে।

ছয়: ইন্টারনেট ও অন্যান্য প্রযুক্তির বদৌলতে বর্তমানে আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার যে অবারিত সুযোগের মধ্যে বাস করছি এগুলোর ফলে জ্ঞার্নাজন কেবল একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং শিক্ষামূলক বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে এবং এগুলোতে বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। নামমাত্র মূল্য দিয়ে কিংবা বিনামূল্যে অংশগ্রহণকারীগণকে এগুলো থেকে সার্টিফিকেট দেয়া হয়। এ ধরণের ওয়েবসাইটগুলো ফলোআপ করা ও এগুলো থেকে উপকৃত হওয়া -ইনশাআল্লাহ্‌- ফলপ্রসু।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনাকে দুই জাহানে সুখীদের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তিনি যা ভালোবাসেন ও যেটার প্রতি সন্তুষ্ট আপনাকে সেসব আমল করার তাওফিক দেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব