শুক্রবার 10 শাওয়াল 1445 - 19 এপ্রিল 2024
বাংলা

যে ব্যক্তির মনে বিভিন্ন কুমন্ত্রণা আসে এবং তিনি ভয় পাচ্ছেন যে, শয়তান তার ঈমান ছিনিয়ে নিবে

প্রশ্ন

আপনারা আমার জন্য সঠিক ধর্মের উপর অবিচল থাকতে পারার দোয়া করুন। আমি শয়তান দ্বারা ফিতনাগ্রস্ত। শয়তান তার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করছে আমার ধর্ম পরিবর্তন করে দিতে, আমার প্রভুর প্রতি আমার আস্থা ও নিজের প্রতি আস্থা পরিবর্তন করে দিতে। আমি মহান আল্লাহ্‌র কসম করে বলছি: আমি এমন কষ্টের মধ্যে আছি যা আমার প্রভু ছাড়া আর কেউ জানে না। শয়তান আমার অন্তর থেকে ঈমান ছিনিয়ে নিতে চায় এবং আমাকে কুফর ও বিভ্রান্তিতে প্রবেশ করাতে চায় -আশ্রয় আল্লাহ্‌র-। এমনকি শয়তান আমার নিজের আকৃতি ধারণ করে। কখনও কখনও কালিমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ করে। অর্থাৎ সে আমার সাথে পরিপূর্ণ করে এবং নামাযের মত ইবাদতের নিয়তে সন্দেহ প্রবেশ করায়। আমার সাথে নামাযে প্রবেশ করে আমার নামায নষ্ট করে; হয়তো বাধ্যগত শুচিবায়ুর মাধ্যমে। সে আমার সাথে সূরা ফাতিহা পড়ে, তাশাহ্‌হুদ পড়ে, সালাম ফিরায়। আমি আমার ঈমানের ব্যাপারে বিপদ সংকুল অবস্থার মধ্যে আছি। আমি আশংকা করছি তার টার্গেট হচ্ছে আমাকে ও প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিকে কাফের বানানো কিংবা আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করানো। হয়তো তাকে বিচ্যুত করার মাধ্যমে কিংবা কাফের বানানোর মাধ্যমে। আপনারা এই পরীক্ষা থেকে মুক্ত হতে আমাকে সাহায্য করুন।

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, শান্ত হোন। আপনি যেভাবে কল্পনা করছেন ও ধারণা করছেন বিষয়টি এর চেয়ে অনেক হালকা। আপনি যাতে আক্রান্ত সেটার উদাহরণ ছায়ার মত; যা বড় হতে হতে দেয়াল জুড়ে আছে। যেহেতু আলোর উৎসকে ধোঁকা দেয়ার পজিশনে রাখা হয়েছে। যদি এই উৎসকে সঠিক স্থানে রাখা হয় তাহলে ছায়া এর প্রকৃত রূপ গ্রহণ করবে।

উভয় অবস্থায় সেটি ছায়া ছাড়া আর কিছু নয়; সেটা বড় হোক কিংবা ছোট হোক।

নিশ্চয় আপনার অবস্থাটি এ ছায়ার চেয়ে অতিরিক্ত কিছু নয়। সুতরাং শান্ত হোন।

শয়তান আপনার ঈমান ছিনিয়ে নিতে পারবে না। কারণ যিনি ঈমান দেন ও ছিনিয়ে নেন তিনি হচ্ছেন আল্লাহ্‌। তিনি যদি আপনাকে রক্ষা করেন আপনি সকল অনিষ্ট থেকে বেঁচে যাবেন।

আপনি যদি শয়তানের এ সকল হুমকি-ধমকি থেকে নিস্তার পেতে চান যেগুলো শয়তান আপনার অন্তরে ঢেলে দিচ্ছে তাহলে আপনার অন্তরকে মজবুত করতে হবে এবং নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন করতে হবে:

১। যখনই আপনার অন্তরে এমন কোন চিন্তার উদ্রেক ঘটবে তখনই আপনি আউজুবিল্লাহ্‌ পড়বেন (আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাইবেন)। আপনি বিরক্ত হবেন না। অচিরেই শয়তান পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাবে। এটি ঘটবেই। এটা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সত্য প্রতিশ্রুতি। যদি শয়তানের কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাইবে। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।[সূরা হা-মীম আস-সাজদাহ, আয়াত: ৩৬]

২। এই কুমন্ত্রণাগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে মুখ ফিরিয়ে নিন। এগুলো নিয়ে বা এগুলোর ব্যাপারে কখনও চিন্তা করবেন না, সংলাপ করবেন না। আপনার মনে যে প্রশ্ন ও আপত্তির উদ্রেক হয় আপনি এর জবাব দিবেন না।

শয়তানের কুফরি, বিভ্রান্তি কিংবা আগুনের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে ভেঙ্গে পড়বেন না। কেন; জানেন? কারণ আপনার ঈমানের মূল্যায়নে এ সবের কোন দাম নেই এবং এসবের কিছু আদৌ ঘটবে না।

এগুলো হচ্ছে স্ক্রীনে ভয়ানক দৃশ্যাবলী দেখার মত; যা দর্শককে কষ্ট দেয়। যদি আপনি স্ক্রীনটি বন্ধ করে ফেলেন তাহলে সবকিছু শেষ।

৩। আপনার সময়, চিন্তা ও অন্তরকে কল্যাণকর ও উপকারী কাজ দিয়ে ভরপুর করে রাখুন। ভাল মানুষদের সাথে মেলামেশা করুন। সম্ভবত আপনি একাকীত্ব ও অবসরে ভুগছেন। কারণ শয়তান ভরা পাত্রে আসতে পারে না।

৪। রাত ও দিনের প্রহরে দোয়া করুন। কারণ আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নিরাময় আসলে আর কোন রোগ ও পরীক্ষা অবশিষ্ট থাকে না।

৫। দিবানিশি এবং প্রতিটি সময়, প্রতিটি ক্ষণে আল্লাহ্‌র যিকিরের মাধ্যমে সুরক্ষা গ্রহণ করুন। কারণ শত্রুর ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে সুরক্ষায় সার্বক্ষণিক আল্লাহ্‌র যিকিরের চেয়ে উত্তম কিছু নেই। আপনার জিহ্বা যেন আল্লাহ্‌র যিকিরে সিক্ত থাকে।

৬। এই ঈমানী চিকিৎসার সাথে সাথে অবশ্যই আপনার উচিত দক্ষ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। কারণ আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় বাধ্যগত শুচিবায়ুর ডাক্তারি ভাল ও উপকারী চিকিৎসা রয়েছে। আপনি যদি উভয় চিকিৎসা (ঈমানী ও ডাক্তারি)-র মাঝে সমন্বয় করেন সেটা আপনার জন্য কল্যাণকর এবং আপনার রোগমুক্তির ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক।

আপনি যদি এই উপদেশগুলো গ্রহণ করেন, নিয়মিত এগুলো পালন করেন এবং এভাবে চেষ্টা চালিয়ে যান ইনশাআল্লাহ্‌ আপনি নিরাময়ের সুসংবাদ পেতে থাকবেন। ক্রমান্বয়ে আপনার আরোগ্য লাভ বাড়তে থাকবে। আল্লাহ্‌র তাওফিকে এক পর্যায়ে কিছুদিনের মধ্যে আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন।

আরও জানতে দেখুন: 102851 নং ও 25778 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ আপনাকে ঈমানের উপর অবিচল রাখুন এবং আপনার উপর নিরাময় ও ক্ষমা ঢেলে দিন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব