বৃহস্পতিবার 18 রমজান 1445 - 28 মার্চ 2024
বাংলা

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাযের পদ্ধতি

প্রশ্ন

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামায পড়ার পদ্ধতি কী?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

আবু মাসউদ আল-আনসারি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্য থেকে দুইটি নিদর্শন। এ দুইটির মাধ্যমে আল্লাহ্‌ বান্দাদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেন। কোন মানুষের মৃত্যুর কারণে এ দুটোর গ্রহণ ঘটে না। কাজেই যখন গ্রহণ দেখবে, তখন তোমরা এ পরিস্থিতি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত নামায আদায় করবে এবং দোয়া করতে থাকবে।”।[সহিহ বুখারী (১০৪১) ও সহিহ মুসলিম(৯১১)]

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন; তিনি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। এরপর তিনি মসজিদে আসেন। এর আগে আমি তাঁকে যেমন করতে দেখেছি, তার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম, রুকু ও সিজদা সহকারে নামায আদায় করলেন। আর তিনি বললেন: এগুলো হল আল্লাহ্‌ কর্তৃক প্রেরিত নিদর্শন; এগুলো কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে ঘটে না। বরং আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা তাঁর বান্দাদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেন। কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত বিহ্বল অবস্থায় আল্লাহর যিকির, দু’আ ও ইস্তিগফারে মগ্ন হবে।”।[সহিহ বুখারী (১০৫৯) ও সহিহ মুসলিম (৯১২)]

দুই:

সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের নামাযের পদ্ধতি হল:

তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলবে। সানা পড়বে। এরপর আউযুবিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বে। তারপর দীর্ঘ তেলাওয়াত করবে।

এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করবে।

এরপর রুকু থেকে উঠে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলবে।

এরপর সূরা ফাতিহা পড়বে এবং দীর্ঘ তেলাওয়াত করবে; তবে পরিমাণে প্রথম রাকাতের তেলাওয়াতের চেয়ে কম।

এরপর দ্বিতীয়বার রুকু করবে এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকবে; তবে প্রথম রুকুর চেয়ে কম সময়।

এরপর রুকু থেকে উঠে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।

এরপর দীর্ঘ দীর্ঘ দুইটি সেজদা করবে এবং দুই সেজদার মাঝখানেও দীর্ঘসময় বসে থাকবে।

এরপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে এবং প্রথম রাকাতের মত দুই রুকুসহ ইত্যাদি করবে। কিন্তু, সবকিছুর দীর্ঘতা প্রথম রাকাতের চেয়ে কম হবে।

এরপর তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে।

[দেখুন: ইবনে কুদামার রচিত ‘আল-মুগনি’ (৩/৩২৩), নববীর রচিত ‘আল-মাজুম’ (৫/৪৮)।

এই পদ্ধতির প্রমাণ রয়েছে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিসে যা ইমাম বুখারী (১০৪৬) ও ইমাম মুসলিম (২১২৯) সংকলন করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় একবার সূর্যগ্রহণ হয়। তখন তিনি মসজিদে গমন করেন। বর্ণনাকারী বলেন: লোকেরা তাঁর পেছনে সারিবদ্ধ হল। তিনি তাকবীর দিলেন (আল্লাহু আকবার বললেন)। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ তেলাওয়াত করলেন। এরপর তাকবীর বললেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকলেন। এরপর ‘সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে দাঁড়ালেন এবং সিজদায় না গিয়েই আবার দীর্ঘক্ষণ তেলাওয়াত করলেন। তবে তা প্রথম তেলাওয়াতের চেয়ে কম ছিল।

তারপর তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দীর্ঘ একটি রুকু করলেন; তবে তা প্রথম রুকুর চেয়ে কম ছিল।

তারপর তিনি ‘সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বললেন।

এরপর সিজদা করলেন। অতঃপর তিনি পরবর্তী রাকাতেও অনুরূপ করলেন।

এভাবে চার সিজদা ও চার রুকু পূর্ণ করলেন।”

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব