রবিবার 19 শাওয়াল 1445 - 28 এপ্রিল 2024
বাংলা

তেলাওয়াতের সিজদার পদ্ধতি ও এর জন্য পবিত্রতা

প্রশ্ন

তেলাওয়াতের সিজদার জন্য কি পবিত্রতা শর্ত? সিজদা দেয়া ও উঠার সময় কি তাকবীর দিবে; চাই সেটা নামাযের ভেতরে হোক কিংবা বাইরে? সিজদার মধ্যে কী বলবে? সিজদাতে পঠিতব্য যে দোয়াগুলো উদ্ধৃত হয়েছে এর মধ্যে কি কোন সহিহ দোয়া আছে? নামাযের বাইরে হলে এই সিজদা থেকে সালাম ফিরানোর কি বিধান রয়েছে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলেমদের দুটো অভিমতের মধ্যে সঠিক মতানুযায়ী তেলাওয়াতের সিজদার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়, এর থেকে সালাম ফিরানো নেই এবং সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর নেই।

সিজদাতে যাওয়ার সময় তাকবীর দেয়ার বিধান রয়েছে। যেহেতু ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এই মর্মে প্রমাণ সাব্যস্ত হয়েছে।

তবে নামাযের মধ্যে তেলাওয়াতের সিজদা দেয়াকালে সিজদা দেয়া ও সিজদা থেকে ওঠার সময় তাকবীর দেয়া আবশ্যক। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের মধ্যে প্রত্যেক ওঠানামার সময় তা করতেন। এবং যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সূত্রে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ সেভাবে নামায পড়[সহিহ বুখারী (৫৯৫)]

নামাযের সিজদাতে যে যে দোয়া পড়া শরিয়তসম্মত তেলাওয়াতের সিজদাতেও সে সে দোয়া পড়া শরিয়তসম্মত—   এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর নির্দেশনার সার্বিকতার কারণে। এ ধরণের দোয়ার মধ্যে রয়েছে:

اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِه، وَقُوَّتِهِ، تَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسنُ الْخَالِقينَ

(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই সিজদাহ করেছি, আপনার ওপরই ঈমান এনেছি, আপনার কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়েছি। আমার মুখমণ্ডল সিজদায় অবনত সেই মহান সত্তার জন্য, যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দিয়েছেন, আর তার কান ও চোখ বিদীর্ণ করেছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ সুমহান।) ইমাম মুসলিম তাঁর সহিহ হাদিসের সংকলনে (১২৯০) আলী (রাঃ) এর সূত্রে এ যিকিরটি উদ্ধৃত করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাযের সিজদাতে এই যিকিরটি বলতেন।

ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নামাযের সিজদাতে যা যা বলা শরিয়তসম্মত তেলাওয়াতের সিজদাতেও তা তা বলা শরিয়তসম্মত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি তেলাওয়াতের সিজদাতে বলতেন:

اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ أَجْراً، وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْراً، وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْراً، وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ

(অর্থ: হে আল্লাহ! এই সিজদার বদৌলতে আপনার নিকট আমার জন্য একটি প্রতিদান লিখুন এবং এর দ্বারা আমার একটি গুনাহ মুছে দিন, এটাকে আমার জন্য আপনার কাছে সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখুন। আর আমার পক্ষ থেকে এই সিজদাকে কবুল করে নিন; যেভাবে আপনার বান্দা দাউদ আলাইহিস সালাম-এর থেকে কবুল করেছেন।)[সুনানে তিরমিযি (৫২৮)]

এক্ষেত্রে ওয়াজিব হলো নামাযের সিজদার মত: سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلى (আমার সুউচ্চ প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা করছি) বলা। এর বেশি যা কিছু পড়া হয় সেটি মুস্তাহাব।

নামাযের ভেতরে কিংবা নামাযের বাইরে তেলাওয়াতের সিজদা দেয়া সুন্নত; ওয়াজিব নয়। যেহেতু যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হাদিসে এবং উমর (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হাদিসে এই প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহই তাওফিক দেয়ার মালিক।

সূত্র: মাজমুউ ফাতাওয়া ও মাক্বালাতি সামাহাতিশ শাইখ ইবনে বায (১১/৪০৬)