Islam QA ওয়েবসাইটের জন্য দান করুন

আমরা আশা করছি, আপনাদের ওয়েবসাইট Islam Q&A (ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব) কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মুক্তহস্তে দান করবেন; যাতে করে ইনশা আল্লাহ্‌ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবায় আপনাদের ওয়েবসাইট তার পথ চলা অব্যাহত রাখতে পারে।

তাওরাত ও ইঞ্জিলকে অসম্মান করা জায়েয নেই

20-12-2023

প্রশ্ন 145665

আমি জানি কুরআনের কপি ফেলে দেওয়া জায়েয নেই। আমাদেরকে নির্দিষ্টভাবে সেটা পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। কিন্তু আমাদের জন্য কি তাওরাত ও ইঞ্জিল ফেলে দেওয়া হারাম? নাকি আমাদেরকে সেটাও সংরক্ষণ করতে হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

একজন মুসলিমের উপর আল্লাহর সকল রাসূল এবং অবতীর্ণ সব কিতাবের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ বলেন: “রাসূলের কাছে তার রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে তিনি তার প্রতি ঈমান এনেছেন, ঈমানদারগণও (ঈমান এনেছে)। সবাই আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি ও তাঁর রাসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে। (তারা বলেছে) আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কারো সাথে কারো তারতম্য করি না।”[সূরা বাকারা: ২৮৫]

“মুমিনরা ঈমান রাখে যে, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া কোনো রব নেই। তারা সকল নবী, রাসূল এবং তাদের উপর আসমান থেকে অবতীর্ণ কিতাবসমূহে বিশ্বাস করে।”[তাফসীর ইবনে কাসীর (১/৭৩৬)]

মহান আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়েছেন যে আহলে-কিতাবরা তাওরাত ও ইঞ্জিল বিকৃত করেছে। তারা আল্লাহর বাণী বদলে দিয়েছে। কিন্তু তাদের এই বিকৃতি তাদের সব বইয়ের সর্বাংশ জুড়ে হয়নি। বরং তাদের বইগুলোতে এখনও কিছু সত্য রয়ে গিয়েছে। এ কারণে তাদের বইগুলোকে অসম্মান করা জায়েয হবে না। যেহেতু সেগুলোতে এখনো আল্লাহর কিছু বাণী এবং আল্লাহর নাম ও গুণাবলি আছে।

হাইতামী তার ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ বইয়ে  (১/১৭৮) বলেন:

“সত্য হলো: এই বইগুলোতে কিছু অপরিবর্তিত বিষয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যেহেতু উক্ত বিষয়গুলো আমাদের শরীয়ত থেকে জানা বিষয়ের সাথে হুবহু মিলে যায়।”

খতীব শারবীনী রাহিমাহুল্লাহ বলেন:

“সম্মানিত নয় এমন কিছু দিয়ে নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জন করা জায়েয। ... কাযী তাওরাত ও ইঞ্জিলের পাতা দিয়ে পবিত্রতা অর্জনকে বৈধ বলেছেন। তার কথাটা এ দুই কিতাবের এমন পাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যেটার বিকৃতি সম্পর্কে জানা গেছে এবং যাতে আল্লাহর নাম বা অনুরূপ কিছু না থাকে।”[সংক্ষেপে সমাপ্ত][‘মুগনিল মুহতাজ’ (১/১৬২-১৬৩)]

খিরাশী তার ‘মুখতাসার’ বইয়ে (৮/৬৩) বলেন:

“(সম্মানের ক্ষেত্রে) আল্লাহ ও নবীদের নামসমূহ মুসহাফের মত। কারণ সেগুলোও সম্মানিত।”[সমাপ্ত]

হাত্তাব তার ‘মাওয়াহিবুল জালীল’ বইয়ে (১/২৮৭) বলেন:

“আল্লাহর নামগুলোকে মর্যাদা দেওয়া আবশ্যক। এমনকি যদি এই নামগুলোকে এমন কিছুর ভেতরে লেখা হয় যেটাকে অসম্মান করা আবশ্যক, যেমন: বিকৃত তাওরাত ও বিকৃত ইঞ্জিল। সেক্ষেত্রে এগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা বা নষ্ট করা জায়েয। কিন্তু এই নামগুলোর মর্যাদার কারণে সেগুলোকে অসম্মান করা জায়েয নয়।”[সমাপ্ত]

দুই:

মুসলিমের জন্য উক্ত বইগুলোর কোনোটি নিজের সংগ্রহে রাখা ঠিক নয়। তবে যদি ব্যক্তি আলেম হন এবং এগুলোতে বিদ্যমান বিকৃতি ও মিথ্যা উদঘাটন করার জন্য পড়েন, তখন বৈধ হবে।

আহমদ (১৪৭৩৬) বর্ণনা করেন, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: উমর ইবনুল খাত্তাব একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আহলে-কিতাবের কোনো একজন থেকে সংগৃহীত একটি কিতাব নিয়ে আসলেন। এরপর তিনি সেটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পড়ে শুনালেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন: “তোমরা কি (শরীয়তের ব্যাপারে) কোনো দ্বিধা-সংশয়ে পড়েছ, হে খাত্তাবের ছেলে! যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি, আমি শুভ্র ও নির্মল শরীয়ত নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছি। তোমরা তাদেরকে কোনো ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে না; কারণ তারা সত্য জানালেও তোমরা সেটাকে অবিশ্বাস করে বসবে। আবার মিথ্যা বললেও তোমরা সেটাকে বিশ্বাস করে বসবে। সেই সত্তার শপথ যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ! যদি মুসাও জীবিত থাকত তার জন্য আমাকে অনুসরণ করা ছাড়া উপায় থাকত না।”[শাইখ আলবানী ‘ইরওয়া’ বইয়ে (৬/৩৪) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

তাই আমাদের হাতে আহলে-কিতাবের কোন বইয়ের কোন কিছু পড়লে সেটা সংগ্রহে রাখা জায়েয হবে না। অনুরূপভাবে অসম্মান করে আবর্জনায় নিক্ষেপ বা অনুরূপ কিছু করাও জায়েয হবে না। বরং পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে সেটা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হবে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলোতে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি থাকে। আবার সেখানে আল্লাহর এমন কিছু বাণী থেকে যেতে পারে যেগুলো আহলে-কিতাবেরা বিকৃত করেনি।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব ওয়েবসাইটে দেখান